Marxists Internet Archive
Bangla Section
জার্মান ভাবাদর্শ
কার্ল মার্কস
ফয়েরবাখ: বস্তুতান্ত্রিক আর ভাবতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির বিরোধ
জার্মান আদর্শবাদীদের কাছ থেকে যেমন জানতে পাই, গেল কঞ্চবছরে জার্মানী এক অতুলনীয় বিপ্লবের মধ্য দিয়ে গেছে। হেগেলের দর্শনের গেঁজে ওঠা শুরু হয় স্ট্রসঞ্চর সাথে। সেই গাঁজন এমন এক চোলাই তৈরী করলো যার মাঝে পূর্বের সকল শক্তিই গেল গুলিয়ে। এই সাধারণ হুড়োহুড়ির মাঝে বিশাল বিশাল সাম্রাজ্য তৈরী হয়েছে শুধুমাত্র তলিয়ে যাবার জন্য। বড় বড় নায়কেরা মুহূর্তের মধ্যে আবির্ভূত হয়ে বিস্মৃত হয়েছেন আরো বড় প্রতিযোগীর আগমনের ফলে। তা ছিল এমন এক বিপ্লব যার কাছে ফরাসি বিপ্লব বালখিল্য। এই সংঘাতের কাছে কোথায় লাগে দায়াদোচির(৪) সংঘাত? আদর্শগুলো একে অপরকে উচ্ছেদ করলো। চিন্তা নায়কঞ্চরা অশ্রুতপূর্ব দ্রুততায় একজন আরেকজনকে উল্টে ফেলে দিলেন। আর ১৮৪২- ১৮৪৫ এই তিন বছরে অতীতের যতটা উড়ে গেল, এমনিতে তা যেতে তিনশো বছর লাগার কথা।
ধরা যাক যে এসবই ঘটেছে বিশুদ্ধ চিন্তার সাম্রাজ্যে।
সন্দেহ নেই, যে ঘটনাটা নিয়ে আমরা আলাপ সালাপ করছি তা বেশ কৌতুহলোদ্দীপক। ঘটনাটা হলো পরম মর্মের পঁচন। যখন তার জীবন প্রদীপের শেষ ফুলকিটাও নিভে গেল, পঁচতে শুরু করলো তার মূল্যহীন অবশেষ বিভিন্ন উপাদান। এগুলো ঢুকে পড়লো নতুন বিন্যাসে, তৈরী হলো নতুন উপাদান। দর্শনের এই শিল্পপতিরা এত দিন বেঁচে ছিলেন পরম মর্মকে শোষণ করে। তারা এবার হামলে পড়লেন নতুন বিন্যাসগুলোর উপর। প্রত্যেকে যথাসম্ভব উদ্যম নিয়ে নিজের ভাগের শেয়ার খুচরো দরে বিক্রির জন্য ছুটলেন। ফলে স্বাভাবিকভাবে জন্ম হলো প্রতিযোগিতার। প্রতিযোগিতাটা শুরুর দিকে চললো সহনীয় রকম গাম্ভীর্যের বুর্জোয়া ফ্যাশনে। পরে জার্মান বাজার সয়লাব হয়ে গেল। শত চেষ্টাতেও পণ্যগুলো আর বিশ্ববাজারে কোন কদর পেল না। গতানুগতিক জার্মান স্টাইলে ব্যবসাটা লাটে উঠলো, কারণ ততদিনে শুরু হয়ে গেছে নকল আর ঠুনকো উৎপাদন, মানে অবনতি, কাঁচামালে ভেজাল মেশানো, মিথ্যে লেবেল আঁটা, ভুয়া খরিদ, বিল নিয়ে গড়িমসি, আর এমন একটা ধারের পদ্ধতি যার কোন বাস্তব ভিত্তিই নেই। প্রতিযোগিতা হয়ে গেল তিক্ত সংঘাত। আমাদের কাছে সংঘাতটা ব্যাখ্যা করা হল, আর তুলে ধরা হলো বৈশ্বিক তাৎপর্যবহনকারী, সবচাইতে উৎকৃষ্ট ফলাফল আর অর্জনের উত্তরাধিকারী বলে।
এই দার্শনিক বকুনি যা এমনকি সৎ জার্মানদের বুকেও জাতীয় গৌরবের ছোঁয়া লাগিয়েছিল, যদি তার আসল মূল্য যাচাই করতে চাই, যদি স্পষ্টভাবে বের করে আনতে চাই নব্য হেগেলপন্থীদের পুরো আন্দোলনের ক্ষুদ্রতা, সংকীর্ণ সীমাবদ্ধতা, যদি বুঝতে চাই এই নায়কদের প্রাপ্তির মায়া আর তাদের খোদ আসল প্রাপ্তির ট্রাজি-কমিক বেমিল- তাহলে পুরো দৃশ্যটাকে অবশ্যই দেখতে হবে জার্মানীর সীমানার বাইরের কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে।