Marxists Internet Archive
Bangla Section
ডেমোক্রেটিয় ও এপিকিউরিয় প্রকৃতির দর্শনের পার্থক্য
কার্ল মার্কস
দ্বিতীয় অংশ: বিস্তারিতভাবে ডেমোক্রিটিয় ও এপিকিউরিয় পদার্থবিদ্যার পার্থক্য
দ্বিতীয় অধ্যায়: পরমাণুর ধর্মসমূহ
পরমাণুর স্বাভাবিক ধর্ম থাকা উচিত- এই বিবৃতিটি পরমাণুর ধারণার বিরোধী। কারণ এপিকিউরাস যেমন বলেন, প্রত্যেকটি গুণ বা ধর্ম পরিবর্তনশীল; যদিও পরমাণুর পরিবর্তন ঘটে না। তা সত্ত্বেও প্রামানিক ফল হচ্ছে পরমাণুর গুণ বা ধর্ম আরোপ করা। প্রকৃতপক্ষে, ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য স্থান দ্বারা আলাদাকৃত বিকর্ষণের পরমাণুসমূহের অবশ্যই প্রামানিকভাবে একটির চেয়ে অন্যটির প্রত্যক্ষ পার্থক্য থাকতে হবে। এবং পার্থক্য থাকতে হবে তাদের খাঁটি সারসত্তার থেকে। তারমানে, তাদের অবশ্যই গুণ থাকতে হবে।
আলোচ্য বিশ্লেষণে তাই আমি স্নেইডার এবং নুর্নবার্গার- এর মতামতকে গ্রাহ্য করব না। তাঁরা বলেন, জ্ঞএপিকিউরাস পরমাণুগুলোর উপর কোন ধর্ম বা গুণ আরোপ করে না; হেরোডোটাসের প্রতি লেখা চিঠি থেকে ৪৪ এবং ৫৪ তম অনুচ্ছেদদ্বয়ে ডায়োজিনিস লেরটিয়াসের লেখাকে অন্যায়ভাবে সন্নিবেশিত করা হয়েছিল।ঞ্চ এটা যদি সত্যিই হত, তাহলে কিভাবে জ্ঞকেউঞ্চ লুক্রেটিয়াস, প্লুটার্ক এবং এপিকিউরাসের পক্ষে দাঁড়ানো অন্যান্য লেখকদের প্রমাণকে বাতিল করেন? অধিকন্তু ডায়োজিনিস লেরটিয়াস পরমাণুর গুণাবলীকে দুটি নয়, বরং দশটি অনুচ্ছেদের মধ্যে উল্লেখ করেছেন- নম্বরগুলো হলো: ৪২, ৪৩, ৪৪, ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭, ৫৮, ৫৯ এবং ৬১। এইসব সমালোচকেরা তাদের যুক্তির ভিত্তি দেন এভাবে- জ্ঞতারা জানে না কিভাবে পরমাণুর ধারণার সাথে এর গুণাবলীকে পুনর্মিলিত করতে হয়ঞ্চ। কিন্তু এই ভিত্তি গভীর নয়। স্পিনোজা বলেন- অঞ্চতার কোন অজুহাত নেই [স্পিনোজা, নীতি-শাস্ত্র, প্রথম ভাগ, প্রতিপাদ্য ৩৬, পরিশিষ্ঠ]। কেউ একজন যদি প্রাচীনদের না বোঝা অনুচ্ছেদগুলো মুছে ফেলতে চায়, তাহলে কত দ্রুতই না আমরা একটি অলিখিত ফলকের ন্যায় মনের জ্ঞসর্বধারণা মুক্তঞ্চ অবস্থা পেয়ে যাব!
গুণাবলীর মধ্য দিয়ে পরমাণু এমন একটি অস্তিত্ব লাভ করে, যা এর ধারণা-বিরুদ্ধ। এটাকে এর সারসত্তা থেকে পৃথক, বহিঃস্থ একটি সত্তা হিসেবে স্বীকার করে নেয়া হয়। মূলত: এটা সেই দ্বন্দ্ব, যা এপিকিউরাসকে আগ্রহী করে তোলে। সুতরাং যখনই তিনি স্বাভাবিক ধর্ম বা গুণকে সত্য বলে মেনে নেন এবং এভাবে পরমাণুর বস্তুগত-প্রকৃতির ফলাফলের চিত্র আঁকেন, একই সময়ে তিনি নির্ধারণকে সত্য বলে মেনে নেয়ার বিরুদ্ধেও থাকেন। এই বিরোধিতা এর নিজের স্তরে এই ধর্মকে এবং পরমাণুর ধারণার পরিবর্তে এর বৈধতাকে ধ্বংস করে। সে কারণে তিনি এমনভাবে সকল ধর্মসমূহকে নির্ধারণ করেন যে, তারা নিজেরাই নিজেদের মাঝে স্ব-বিরোধিতা করে। অন্যদিকে, ডেমোক্রিটাস পরমাণুর নিজের সম্পর্কগুলোর মধ্যে কোথাও ধর্মসমূহকে বিবেচনা করেন না। এমনকি, তাদের ধারণা এবং অস্তিত্বের দ্বন্দ্ব, যা তাদের মধ্যে সহজাত, তা নিয়ে কোন আপত্তিও তোলেন না। বরং তাঁর সমস্ত আগ্রহ থাকে সেই ঘনীভূত প্রকৃতির সাথে ধর্মসমূহের সম্পর্ক উপস্থাপনে, যাকে তাদের ভেতর হতেই আঙ্গিক দিতে হয়। তাঁর কাছে এগুলো কেবলমাত্র সেই বহুত্ব ব্যাখ্যা করার প্রকল্প, যে বহুত্ব এটাকে প্রতিভাসিত করে। এটা থেকে এই ধারণা পাওয়া যায় যে, তাদের সাথে পরমাণুর ধারণাঞ্চর কোন সম্পর্ক নেই।
আমাদের মতামতকে প্রমাণ করতে হলে প্রথমেই বিশদভাবে সেই উৎসগুলোকে ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন, যেগুলোকে এখানে পরস্পর-বিরোধী বলে মনে হয়। ঈন সরতদভঢ়ভড় সবভরষড়ষসবষক্ষয়ল প্রবন্ধটিতে আমরা পাই:
জ্ঞএপিকিউরাস বলেন যে, পরমাণুগুলোর তিনটি গুণ বা ধর্ম আছে: আকার, আকৃতি, ওজন। ডেমোক্রিটাস বলেছিলেন শুধুমাত্র দুটোর কথা: আকার এবং আকৃতি। এপিকিউরাস তৃতীয় ধর্ম বা গুণ হিসেবে যুক্ত করেন জ্ঞওজনঞ্চকে।ঞ্চ একই অনুচ্ছেদের পুনরাবৃত্তি ঘটে য়ুসেবিয়াসের ঙক্ষতনসতক্ষতঢ়ভষ নৎতশফনরভদত-তে।
সিমপ্লিসিয়াস এবং ফিলোফনাসের প্রমাণ দ্বারা এটা নিশ্চিত যে, ডেমোক্রিটাস পরমাণুর আকার এবং আকৃতিতে পার্থক্য আরোপ করেন। এর সরাসরি বিপরীতে দাঁড়ান এরিস্টটল। তিনি ঈন ফনশনক্ষতঢ়ভষশড় নঢ় নষক্ষক্ষয়সঢ়ভষশড় বইতে ডেমোক্রিটাসের পরমাণুর উপর জ্ঞওজনেরঞ্চ পার্থক্য আরোপ করেন। আরেকটি অনুচ্ছেদে (ঈন দতনরষ-র প্রথম বইতে) এরিস্টটল জ্ঞডেমোক্রিটাস পরমাণুর উপর ওজন আরোপ করেন, কি করেন নাঞ্চ এই প্রশ্নটি অমীমাংসিত হিসেবে রেখে যান। তিনি বলেন :
জ্ঞএভাবে যদি প্রত্যেকটি দেহেরই ওজন থাকে, তাহলে কোনটিই পরম হালকা হবে না; কিন্তু প্রত্যেকেরই যদি লঘুত্ব থাকে, তাহলে কেউই ভারী হবে না।ঞ্চ
রিটের তাঁর নিজের ঋনড়দবভদবঢ়ন ধনক্ষ তরঢ়নশ ঙবভরষড়ষসবভন নামের লেখাটিতে এরিস্টটলের বরাতের উপর ভিত্তি করে প্লুটার্ক, য়ুসেবিয়াস এবং স্টোবিউসের মতামতকে প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি সিমপ্লিসিয়াস এবং ফিলোপনাসের প্রশংসাপত্রকে বিবেচনাতেই আনেন নি।
এখন দেখা যাক, এই অনুচ্ছেদগুলো আদতেই এতটা পরস্পর-বিরোধী কি না। উল্লেখিত অনুচ্ছেদটিতে এরিস্টটল পরমাণুর গুণ বা ধর্মাবলীর ব্যাপারে পেশাদারের মতো কথা বলেন না। অন্যদিকে পরাতত্ত্বের অষ্টম অংশে আমরা দেখি:
জ্ঞডেমোক্রিটাস পরমাণুগুলোর মধ্যবর্তী তিনটি পার্থক্যের কথা স্বীকার করে গেছেন। অন্তর্নিহিত দেহের ক্ষেত্রে এটি বস্তুর সাথে এক ও অভিন্ন; কিন্তু আকার, অবস্থান অথবা সুবিন্যস্ততায় তা ভিন্নতা প্রদর্শন করে।ঞ্চ
এই অনুচ্ছেদ থেকে প্রত্যক্ষভাবে সিদ্ধান্ত টানা যেতে পারে যে, ডেমোক্রিটাস পরমাণুর ধর্ম এবং এর ধারণার দ্বন্দ্বকে উপস্থাপন করেন নি। ডেমোক্রিটিয়ান পরমাণুর ধর্মের মধ্যে জ্ঞওজনেরঞ্চ উল্লেখ নেই। শূন্যের কারণে বস্তুর যে খন্ডিত টুকরোগুলো ভিন্ন থাকে, তাদের অবশ্যই বিশেষ আঙ্গিক থাকতে হবে। স্থানিক পর্যবেক্ষণগুলো থেকে এদের বেশ বাহ্যিকভাবে অনুভব করতে হবে। এরিস্টটলের নিম্নোক্ত অনুচ্ছেদটি থেকে এটা আরও পরিষ্কারভাবে উঠে আসবে:
জ্ঞলিউসিপ্পিস এবং তাঁর সঙ্গী ডেমোক্রিটাস মনে করেন যে, উপাদানগুলো হচ্ছে পরিপূর্ণ এবং শূন্য- এগুলোই বস্তু হিসেবে সত্তার ভিত্তি। এটা একদম তাঁদের মতোই যারা মেনে নেন যে, একটি মৌলিক উপাদান অন্য সবকিছুকে এর বিরলতা এবং ঘনত্বকে ধর্মসমূহের নীতি হিসেবে মেনে নেয়ার মাধ্যমে এর প্রভাব দ্বারা পরিচালিত করে। একই পদ্ধতিতে লিউসিপ্পিয়াস এবং ডেমোক্রিটাসও শেখান যে, জিনিসের ভিন্নতার কারণ হচ্ছে পরমাণুগুলোর মধ্যকার পার্থক্য, ভেতরকার সত্তার ক্ষেত্রে পার্থক্য- শুধুমাত্র আকার, সুবিন্যস্ততা এবং অবস্থানে। এর মানে জ্ঞঅঞ্চ এর সাথে জ্ঞগঞ্চ এর পার্থক্য আকৃতিতে, জ্ঞঅগঞ্চ এর সাথে জ্ঞগঅঞ্চ এর পার্থক্য হচ্ছে বিন্যাসে, জ্ঞণঞ্চ এর সাথে জ্ঞগঞ্চএর পার্থক্য হচ্ছে অবস্থানে।ঞ্চ
এই উদ্ধৃতি থেকে এটা প্রমাণিত যে, ডেমোক্রিটাস পরমাণুগুলোর গুণাবলীকে বিবেচনা করেন শুধুমাত্র প্রতিভাসের জগতে পার্থক্যগুলোর গঠনে সম্পর্কের বিচারে; স্বয়ং পরমাণুর সম্পর্কে নয়। এরপর আরও দেখানো হয় যে, ডেমোক্রিটাস জ্ঞওজনঞ্চকে পরমাণুর গুণ বা ধর্মসমূহের প্রয়োজনীয় কিছু বলে মানেনই না। তিনি ওজনকে মেনে নিয়েছিলেন: যেহেতু দেহবিশিষ্ট সবকিছুরই ওজন আছে। একইভাবে, তাঁর অনুসারে, আকারও কোন মৌলিক গুণ বা ধর্ম নয়। এটা একটি আকস্মিক নির্ধারণ, যা পরমাণুতে ইতিমধ্যেই কাঠামোর সাথে একত্রে দেয়া হয়েছে। যখন আকৃতি, অবস্থান এবং বিন্যাস ছাড়া বাড়তি আর কোন কিছুই অন্তর্ভূক্ত ছিল না, ডেমোক্রিটাস আগ্রহী হন শুধুমাত্র কাঠামোগুলোর বৈচিত্র্যে। এপিকিউরাস যেমনটি বলেছেন, তেমনিভাবে একত্রিত হয়ে আকার, আকৃতি ও ওজনে ভিন্ন হয়; এবং পরমাণু এটা নিজের মধ্যেই ধারণ করে। আকৃতি, অবস্থা এবং বিন্যাস হচ্ছে সেই পার্থক্য, যা পরমাণুটি কোন কিছুর সাথে সম্পর্কের মধ্য দিয়ে ধারণ করে। যেহেতু প্রতিভাসের জগতকে ব্যাখ্যা করার জন্য ডেমোক্রিটাসে আমরা কেবলমাত্র প্রকল্পিত নির্ধারণগুলো খুঁজে পাই; এপিকিউরাসের মধ্যে নীতিটির ফলাফল নিজেই আমাদের সামনে উপস্থাপিত হবে। তাই আমাদেরকে তাঁর পরমাণুর গুণ বা ধর্মাবলীর নির্ধারণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করতে হবে।
প্রথমে, পরমাণুর আকার আছে। এবং তারপর আবার, আকার অস্বীকৃত হয়ে যায়। (সেক্ষেত্রে) এটা বলতে হয়, তারা সর্ব আকারের নয়, কিন্তু তাদের আকারের কিছু পার্থক্যকে অবশ্যই স্বীকার করে নিতে হবে। বস্তুতঃ বৃহৎ-এর অস্বীকৃতি শুধুমাত্র ক্ষুদ্রের ওপর আরোপ করা যেতে পারে ন্যূনতম নয় (কারণ এটা স্থান সংক্রান্ত নির্ধারণও হতে পারে); বরং অসীম ক্ষুদ্রতায়, যা দ্বন্দ্বটি প্রকাশ করে। রোসিনিয়াস তাই এপিকিউরাসের জ্ঞজ্ঞটুকরো রচনাঞ্চঞ্চ- এর উপর তাঁর নোটে একটি অনুচ্ছেদ অশুদ্ধভাবে অনুবাদ করেন এবং অন্যটি সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে যান এই বলে:
জ্ঞলেরটিয়াস অনুসারে বললে, এই পদ্ধতিতে এপিকিউরাস পরমাণুর সূক্ষ্ম অবস্থার অবিশ্বাস্য ক্ষুদ্রতাকে সঙ্গত করার চেষ্টা করেছিলেন এই বলে যে, তাদের কোন আকার নেই।ঞ্চ
য়ুসেবিয়াস অনুসারে- এপিকিউরাস সর্বপ্রথম পরমাণুর উপর অসীম ক্ষুদ্রতা আরোপ করেছিলেন, যেখানে ডেমোক্রিটাসও পরমাণুর সর্ববৃহৎ আকার (স্টোবিয়াস বলেন, এমন কি জগতের সমান বৃহৎ) স্বীকার করেছেন। যাই হোক, আমি নিজেকে এখন এই ব্যাপারে জড়াবো না।
একদিক থেকে তা এরিস্টটলের প্রশংসার বিরোধিতা করে। অন্যদিকে য়ুসেবিয়াস, অথবা বরং আলেকজান্দ্রিয়ার বিশপ ডায়োনিসিয়াস, যার কাছ থেকে তিনি উদ্ধৃতি নেন, তা তাঁর নিজেরই বিরোধিতা করে। একই বইয়ে আমরা দেখেছি যে ডেমোক্রিটাস প্রকৃতির নীতির মতো কারণের মধ্য দিয়ে অদৃশ্য দেহের অনুভবকে স্বীকার করেন। এটা অন্ততঃ একদম পরিষ্কার: ডেমোক্রিটাস দ্বন্দ্বের ভয়ে ভীত ছিলেন না; তিনি এতে মনযোগ দেন নি। অথচ এটাই ছিল এপিকিউরাসের মূল আগ্রহ।
এপিকিউরিয় পরমাণুর দ্বিতীয় গুণ হচ্ছে জ্ঞআকৃতিঞ্চ। কিন্তু এই নির্ধারণটিও পরমাণুর ধারণার বিরোধিতা করে এবং এর বিপরীতকেও অবশ্যই স্বীকার করে নিতে হবে। অমূর্ত স্বতন্ত্রতা এর নিজের জন্যই অমূর্ত পরিচিতি; এবং তাই, আকৃতিবিহীন। সে কারণে পরমাণুর আকৃতির পার্থক্যগুলো নির্ধারণ করতে পারা যায় না, যদিও তারা অসীম নয়। এটা বরং আকৃতিগুলোর একটি নির্দিষ্ট এবং সসীম সংখ্যা, যা দ্বারা পরমাণুসমূহ একে অন্য হতে পৃথকীকৃত হয়। এ থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, এখানে যতগুলো পরমাণু আছে, ততগুলো ভিন্ন ভিন্ন কাঠামো নেই; যখন কিনা ডেমোক্রিটাস কাঠামোর সংখ্যা অসীম বলে ধরে নেন। যদি প্রতিটি পরমাণুর একটি নির্দিষ্ট আকৃতি থাকতো, তাহলে এখানে অসীম আকারের পরমাণু থাকতো; তাদের নিজেদের মধ্যে অসীম পার্থক্য থাকতো, যা লাইবনিৎসের মোনাডের মতো আর সবকিছুর চাইতে ভিন্ন। এটা লাইবনিৎসের মতের বিপরীতে দাঁড়ায় যে, দুটো জিনিস কখনো অভিন্ন নয়, এবং এখানে অসীমভাবে একই আকৃতির অনেকগুলো পরমাণু আছে। এটা সুস্পষ্টভাবেই আবার আকৃতির নির্ধারণকে অস্বীকার করে। কারণ একটি আকৃতি যদি অন্য একটির সাথে ভিন্ন রূপ না হয়, তাহলে তা আকৃতি নয়।
শেষত: এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ যে, এপিকিউরাস ওজনকে তৃতীয় গুণ হিসেবে দাঁড় করান। মধ্যাকর্ষণের কেন্দ্রের মধ্যে বস্তু আদর্শ স্বতন্ত্রতা লাভ করে, যা বস্তুর একটি প্রধান নির্ধারক। যেহেতু পরমাণুগুলোকে কোন একবার উপস্থাপনের জ্ঞরাজ্যেঞ্চ আনা হয়েছিল, সেহেতু তাদের অবশ্যই ওজনও আছে।
কিন্তু ওজনও পরমাণুর ধারণার সরাসরি বিরোধিতা করে। কারণ এটা আদর্শিক স্থানের মতো বস্তুর স্বতন্ত্রতা, যা বস্তুর বাইরে অবস্থান করে। কিন্তু পরমাণু নিজেই নিজের এই স্বতন্ত্রতা, যেমনি আকর্ষণে এটি একটি স্বতন্ত্র সত্তা হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছিল। ওজন, তাই, এপিকিউরাসের জন্য শুধুমাত্র জ্ঞপৃথক ওজনঞ্চ হিসেবে বর্তমান থাকে। এবং পরমাণুসমূহ নিজেরাই হচ্ছে আকর্ষণের প্রকৃত কেন্দ্রসমূহ, গ্রহ-নক্ষত্রের মতো। যদি বাস্তবে এর প্রয়োগ করা হয়, তাহলে সুস্পষ্ট ফলাফল হবে সেই ব্যাপারটি, প্রবীণ ব্রাকার যা খুব বিস্ময়ে খোঁজেন, এবং যা হতে লুক্রেটিয়াস দৃষ্টান্তস্বরূপ আমাদের আশ্বাস দেন যে, পৃথিবীর কোন কেন্দ্র নেই যার অভিমুখে সবকিছু ধাবিত হয়; নেই কোন বিপ্রতীপ স্থান। তাছাড়া যখন থেকে ওজন জ্ঞঅন্যদের চেয়ে পৃথকঞ্চ পরমাণুর অধিকৃত ছিল, তখন ঐ পরমাণু বাহ্যিকতা এবং গুণ বা ধর্ম সমৃদ্ধ ছিল। তাহলে এটা পরিষ্কার যে, যেখান পরমাণুগুলোকে একে অন্যের ভিন্নতায় বহু বলে ভাবা হয় নি, সেখানে শূন্যতায় সম্পর্ক সূত্রে ওজনের নির্ধারণতা আর থাকে না। সে কারণে, ভর ও আকৃতিতে যতটুকুই পৃথক হোক, পরমাণুসমূহ একই গতিতে খালি স্থানে চলাফেরা করতে পারে। এভাবে এপিকিউরাস ওজনকে শুধুমাত্র বিকর্ষণ এবং তার ফলে সৃষ্ট বিন্যাসের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেন। এটা সেই মতে নিয়ে যায় যে, শুধুমাত্র পরমাণুসমূহের একত্রিকৃত পিন্ড ওজন দ্বারা সমৃদ্ধ, স্বয়ং পরমাণু নয়।
সম্পূর্ণরূপে বুদ্ধি দ্বারা চালিত হয়ে গ্যাসেন্ডি ইতিমধ্যেই এপিকিউরাসের প্রশংসা করেন পরীক্ষামূলকভাবে প্রদর্শিত ঘটনার কথা বলে। কথাটি হচ্ছে, ওজন এবং ভরে অনেক ভিন্ন দেহও যখন উপর থেকে নিচে পড়ে, তাদের গতি একই থাকে।
পরমাণুসমূহের ধর্মসমূহের এই বিবেচনা আমাদেরকে তাই ক্ষয়ের বিবেচনার একই ফলাফল বা পরিণামের দিকে নিয়ে যায়; যা বললে দাঁড়ায়: এপিকিউরাস পরমাণুর ধারণার মধ্যে সারসত্তা এবং অস্তিত্বের মধ্যকার দ্বন্দ্বকে যুক্তি দিয়ে দেখান। এভাবে তিনি আমাদের উপহার দেন পরমাণু সংক্রান্ত বিঞ্চান। অন্যদিকে, ডেমোক্রিটাসে নীতির নিজস্ব কোন বাস্তবায়ন নেই। তিনি শুধুমাত্র বস্তুগত দিক রক্ষা করেছেন এবং অভিঞ্চতাবাদী পর্যবেক্ষণের সুবিধার জন্য প্রকল্প দান করেছেন।